আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল
অনলাইন ডেস্ক
২৬ মে, ২০২৪, 10:52 PM
অনলাইন ডেস্ক
২৬ মে, ২০২৪, 10:52 PM
আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাব উপকূলে আঘাত হেনেছে। এর ফলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে দমকা বাতাস ও বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে মোংলা ও পায়রা বন্দরে ১০নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে। পূর্বাভাসে আট থেকে বারো ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কার কথাও বলা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়, বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসতে থাকা বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি নিয়ে উপকূলের ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১২-১৪ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে। উপকূলে এখন যে প্রভাব পড়ছে সেটি ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের।
তিনি বলেন, রেমাল মাঝারি ধরনের একটি ঘূর্ণিঝড়। এটি মোংলার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ড হয়ে খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে মধ্যরাতে। এ সময় উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
ভারতের আবহাওয়াবিদ সোমনাথ দত্ত সন্ধ্যা ৭টার দিকে বলেন, গত ছয় ঘণ্টায় এই ঝড়টির এগিয়ে আসার গতি তার আগের সময়ের তুলনায় বেড়েছে। রোববার রাত ১১টার মধ্যে বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের উপকূলীয় এলাকা হয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে রেমালের কেন্দ্র। সূত্র: আনন্দবাজার
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল গত ৬ ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার বেগে উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে ধেয়ে আসছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৫ থেকে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। রেমাল আরও উত্তরের দিকে অগ্রসর হবে। রোববার মধ্যরাতে এটি সাগর দ্বীপ এবং খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল অতিক্রম করবে। সেই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার হতে পারে। তবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে তা ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, উপকূলীয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালী অতিক্রম করবে ঘুর্ণিঝড় রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি এড়াতে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ এই জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৬৪ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি. মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেমালের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়ে আবহাওয়া অফিস।
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
এদিকে রেমালের প্রভাবে জোয়ারে পানিতে পিরোজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া জোয়ারে পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে। কোনো কোনো জায়গায় পানির উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত বেড়েছে। এতে শঙ্কায় আছেন স্থানীয় মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুরের নামাজপুর, ভাইজোড়া, শারিকতলা, পাড়েরহাটসহ কাউখালী, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকার লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, দক্ষিণ চরমোন্তাজ নয়ার চর এলাকায় গ্রাম রক্ষা বাঁধ অতিক্রম করে গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় ১৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে দেড় কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের সময় জরুরি ভাঙন মেরামতের জন্য ১৬ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া জেলার কলাপাড়ায় জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবক মারা গেছেন। জানা গেছে, রোববার দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের পানির ঝুঁকি থেকে বোন ও ফুফুকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি ঢেউয়ে তলিয়ে গিয়ে মারা যান।