কুরবানির হাটে ৭৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের সম্ভাবনা
নিজস্ব প্রতিনিধি
১১ জুন, ২০২৪, 5:35 PM
নিজস্ব প্রতিনিধি
১১ জুন, ২০২৪, 5:35 PM
কুরবানির হাটে ৭৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের সম্ভাবনা
এবার সারা দেশে কুরবানির হাটে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে ধারণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তার মতে, শুধু রাজধানীতেই ২৫ লাখ পশু কুরবানি হবে।
সম্প্রতি ঈদুল আজহা সম্পর্কিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এমন ধারণা দেন তিনি। এ ছাড়া কুরবানি বিষয়ে বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুরবানির পর পশুর বর্জ্য রাখার জন্য ২৫ হাজার ব্যাগের ব্যবস্থা করা হবে। কুরবানির দিন বর্জ্য অপসারণে যিনি প্রথম হবেন তাকে পুরস্কৃত করা হবে। তবে দুপুর ১২টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের সময় দেওয়া হলেও ২৪ ঘণ্টা সময় পাবেন অপসারণ কর্মীরা।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক বা মহাসড়কে কোনো ধরনের কুরবানির পশুর হাট ইজারা দেওয়া যাবে না। এমনকি মৌসুমি ফলের বাজারসহ যেকোনো ধরনের অস্থায়ী বাজার বা দোকান বসানো যাবে না। মূলত সড়ক ও মহাসড়কে স্বাভাবিক যান চলাচলের জন্যই এ সিদ্ধান্ত। যারা এ নির্দেশ মানবেন না তাদের জন্য মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুরবানি পশুর হাটে জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিন বসানো হবে। রাস্তাঘাটে যেন কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবে। বিভিন্ন পশুর হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের সহায়তায় কিউআর কোড, স্মার্ট অ্যাপ, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতি বছরই কুরবানির সময় অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি ব্যস্ত হয়ে ওঠে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। এ কারণে প্রতিটি কুরবানির পশুর হাটে সচেতনতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি মনিটর জোরদার করা হবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যারা কুরবানির পশু কেনাবেচা করবেন তাদের আগাম যেকোনো জালিয়াতি সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
পশুর হাটে ভেটেরেনারি চিকিৎসক বা সার্জন থাকতে হবে। তাদের বসার জন্য পর্যাপ্ত স্থান করে দিতে হবে। প্রয়োজনে বুথ স্থাপন করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট স্থানে পশু কুরবানি করতে হবে। আর পশু জবাই যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয় সেদিকে নজর বাড়ানো হবে। পশু জবাইয়ের স্থান থেকে শুরু করে ইমাম-কসাইদের তালিকা করার নির্দেশ রয়েছে। তবে এ নির্দেশ পালন নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।
গাবতলী ব্রিজের ওপর যেন চামড়ার বাজার না বসে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকায় রাস্তার ওপর যেন ভাসমান বাজার না বসে সে ব্যাপারেও নির্দেশ রয়েছে। কুরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আভাস দিয়েছেন, সারা দেশে এবার কুরবানির হাটে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হবে। আর ঢাকায় ২৫ লাখ পশু কুরবানি হবে। পশুর চামড়ার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি চামড়ায় ৮-১০ কেজি লবণ দিতে হবে, যেন কোনোভাবে চামড়া নষ্ট না হয়।
সভায় বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র কথা বলেন। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, এবার ৩০টি ওয়ার্ডে ১৪৮টি কসাইখানা প্রস্তুত রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, দ্রুত কুরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য ৩২৬টি গাড়ি ও ৪ হাজার ২০০ জন কর্মী নিরলসভাবে কাজ করবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, ৩৩টি ওয়ার্ডকে তিনটি জোনে ভাগ করে ১৭০টি স্থান কুরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, কুরবানির জন্য ১৯১টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, ৯৭ জন সুপারভাইজার ও ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক বর্জ্য অপসারণের জন্য কাজ করবেন।
এদিকে সভায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৯টি সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নামাজ শেষে বের হওয়ার জন্য ঈদগাহের পূর্ব দিকে নতুন দুটি পথ বের করা। এ ছাড়াও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বিশেষ মেডিকেল টিম থাকবে। আর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো থাকবেই। মশা-মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।