ঢাকা ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
রাশিয়ার বহুতল ভবনে ৯/১১-র ধাঁচে ড্রোন হামলা! গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ নির্বাহী অফিসারের বদলী প্রত্যাহার দাবীতে মানববন্ধন বৈষম্যহীন নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে মহান বিজয় দিবস উদযাপন শাহরুখ খানকে নিয়ে ‘অস্বস্তিতে’ পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাহিরা আত্মহত্যায় প্ররোচনা: জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি জাপানের কিভাবে রাশমিকা মান্দানা সৌন্দর্য্য ধরে রেখেছেন তালতলীতে গনঅধিকার পরিষদের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা বরগুনায় কৃষক দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

নির্মাণশৈলীর সাথে জড়িয়ে রয়েছে মগ পর্তুগিজ দমনের ইতিহাস

#

অনলাইন ডেস্ক

২২ মে, ২০২৪,  3:44 AM

news image

প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত শহর বরিশাল। প্রাচীন এই শহরটিতে ইতিহাস ঐতিহ্যের নানা স্থাপনা এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য উলানিয়া জামে মসজিদ। জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬১ সালে। অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এ মসজিদটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে মগ পর্তুগিজদের দমনের ইতিহাস। উলানিয়া জামে মসজিদটি নির্মাণের আলাদা বৈশিষ্টের কারণে সবার দৃষ্টি কেড়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের মে মাসে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। সংস্কার শেষে মসজিদটি পর্যটকসহ সবার প্রশংসা লাভ করেছে।

পঞ্চদশ শতকের গোঁড়ার দিকে এ অঞ্চলে মগ পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণে এখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছিল। এদের দমনের উদ্দেশ্যে মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেব সুবেদার শায়েস্তা খানকে পাঠিয়েছিলেন। শায়েস্তা খান তার পুত্র উমেদ খান ও বিশাল রনতরী সৈন্য গোলাবারুদ নিয়ে জলদস্যু প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেন। তারা মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুরে কেল্লা তৈরী করেন। স্থানীয়ভাবে যা সংগ্রাম কেল্লা নামে পরিচিত ছিল।

মগ পর্তুগীজদের বিতাড়িত করার অভিযানে পারস্য বংশদূত মোঃ হানিফ খান নেতৃত্ব দিয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে হানিফ খান এ দেশকে ভালোবেসে থেকে যান। হানিফ খানের এক কন্যাসন্তান ছিলেন। হানিফের জামাতা এবং ভ্রাতৃপুত্র শেখ মোঃ হাফিজ পরবর্তীকালে সংগ্রাম কেল্লা থেকে সামান্য পশ্চিমে উলানিয়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। হাফিজের পুত্র শেখ মোঃ সদরুদ্দিনের আমলেই উলানিয়ায় জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। তার তিন পুত্র ছিল। এরা হলেন-নয়া রাজা, কালা রাজা ও হাসান রাজা। তাদের সময়েই বসত বাড়িটিকে উঁচু প্রাচীর ঘেরা দুর্গের মত করে নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর বাড়ির প্রধান ফটকের পাশেই প্রায় ১৬৩ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। যা পরবর্তীতে উলানিয়া জামে মসজিদ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর মসজিদটি কয়েক বার সংস্কার করা হলেও মূল অবয়ব এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি অনেকটা তাজমহল আকৃতির। মসজিদের সামনে বাঁধানো পুকুর, মূল গৃহের আগে লোহার ছয়টি খামের ওপর প্রতিষ্ঠিত জাফরির কাজ। এখানে বীমের ছাঁদ ও মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদটির তিনটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ভিতরে একসাথে শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট অন্য মসজিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে নির্মান করা হয়েছে। উলানিয়া জামে মসজিদের গায়ে ছিলো শিলালিপি। এই মসজিদ গাত্রের পুরোনো শিলালিপীটি এখন আর নেই। তবে একই রকম শিলালিপী উৎকীর্ণ রয়েছে। মসজিদের বাহিরের গাত্রে চিনে মাটির টুকরা দিয়ে গড়া। মসজিদটি মূলত মোগলরীতিতে তৈরী। ভেতর ও বাহিরের গাত্রে জ্যামিতিক লতাপাতা ও ফলের নকশা, মসজিদে মূল নামাজ ঘরে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। তিনটি দরজার মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং এটির দুই পার্শ্বের দুই দেয়ালে নকশার নীচে উৎকীর্ণ শিলালিপি ছিলো। ডানদিকের দেয়ালে উৎকীর্ণ পবিত্র কোরাআন শরীফের আয়াত ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অধিকাংশ লেখা টিকে আছে। বা দিকের দেয়ালে ছিল মসজিদ প্রতিষ্ঠা বিষয়ক বক্তব্য। এগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আগেই ফটোগ্রাফি করে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই ফটোগ্রাফি ব্যবহার করেই নতুন শিলালিপি খোদাই করে মসজিদের গাত্রে উৎকীর্ণ করা হয়েছে।

শিলালিপিতে ১০টি লাইন থাকলেও সবগুলো অক্ষুন্ন নেই। যেগুলো রয়েছে তার থেকে অর্থ করলে দাঁড়ায়-প্রভু আল্লাহর ওপর ভরসা করো, শোকে পরিশুদ্ধ মানুষ ইত্যাদি। ১৯৯৩ সালে প্রতœতত্ব বিভাগ মসজিদটিকে সংরক্ষণযোগ্য ঘোষণা করেন। ২০০৩ সালে ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর রশিদ মসজিদটি সংস্কারে ভূমিকা রাখেন। অতঃপর কুয়েত ভিত্তিক মসজিদে সাহায্য দানকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ এস কীওয়ান মসজিদটি সংস্কারের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে মসজিদের ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়। শেষে মসজিদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সৌন্দয্য বহুগুনে বর্ধিত হয়েছে।

মগ পর্তুগিজ জলদস্যুদের তাড়াতে নির্মিত সংগ্রাম কেল্লা কালের বির্বতনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর উলানিয়া জামে মসজিদটিকে এখন অনেকে সংগ্রাম কেল্লা হিসেবে ডেকে থাকেন। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী মসজিদটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করেছে। প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি একনজর দেখার জন্য বিভিন্নস্থান থেকে দর্শনাথীরা এখানে ছুটে আসেন।

logo

প্রকাশকঃ মোঃ সাদ্দাম হোসেন