প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে ঘুস গ্রহন
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 9:49 PM
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 9:49 PM
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে ঘুস গ্রহন
বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনজন কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়োগ বন্ধ ও প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার দুপুওে বরগুনার তালতলী উপজেলার বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীর তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দিতে গত ২৩ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমান । ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে তিন পদে ৩৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে নৈশপ্রহরী ১১, অফিস সহায়ক ১৮ ও আয়া পদে ৭ জন প্রতিন্ধন্ধি প্রার্থী। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দিন ধার্য করেন প্রধান শিক্ষক। ওই অনুসারে তিনি নিয়োগ প্রার্থীদের প্রবেশ পত্র দেন। অভিযোগ রয়েছে এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পুর্বেই প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমান ১৬ জনের কাছ থেকে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগী আল আমিন সিকদারের অভিযোগ নিয়োগ দেয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক তার কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা নিয়েছেন। অঞ্জুরানীর অভিযোগ আয়া পদে তাকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন। শাহীন বিশ্বাসের অভিযোগ নৈশ প্রহরী পদে চাকুরী দেয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক তার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এখন জানতে পারি তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদ নারী সদস্য নুপুর বেগম বলেন, চাকুরী দেয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান আমার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এখন চাকুরী দেয়াতো দুরের কথা আমার টাকাই ফেরত দিচ্ছে না। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফিসের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ, ফরহাদ, মোজাম্মেল, আরিফ, সুব্রত ও আশিক। ঘুস নিয়ে নিয়োগ বানিজ্য ও নানাবিধ দুর্নীতি বন্ধে এবং প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবীতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা মাববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা লিফলেটে লিখেছেন “১৭ লক্ষ টাকার হেড মাষ্টারের পদত্যাগ চাই, অযোগ্য প্রধান শিক্ষক স্কুল ছাড়! টাকা নিয়ে চাকুরী দেয়া চলবে না, সরকারের কাছে বিচার চাই”। আরেক লিফলেটে লিখেছেন “২১ তারিখের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল কর, স্কুল রক্ষা কর। গরীরের টাকা ফেরত দাও”। ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে সভাপতিত্বে করেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ জালাল শিকদার। বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম বিশ্বাস, সোহাগ শিকদার, রফিক সিকদার ও মনোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক মোঃ ইদ্রিসুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে বিদ্যালয় থেকে সটকে পড়েন। তার মুঠোফোনে (০১৩০৯১০০০৪৩, ০১৭১২৪৯৪৫০৩) বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোর রিসিভ করেননি।
তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিটু চট্টোপাধ্যায় বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোন কার্যক্রম নেয়া হয়নি। কিভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তা আমার জানা নেই?
বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বগীর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনেক অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তিনি আরো বলেন,ওই বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে ডিজির কোন প্রতিনিধি দেয়া হয়নি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) অমিত দত্ত বলেন, বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিধান্ত নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন,তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আমাকে একটি বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।