বিষখালী নদীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে রামনা-ফুলঝুড়ি মূল সড়ক
নিজস্ব প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 10:49 PM
নিজস্ব প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 10:49 PM
বিষখালী নদীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে রামনা-ফুলঝুড়ি মূল সড়ক
বরগুনার বিষখালী নদীর অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিলীনের পথে বামনা উপজেলার ৩ নম্বর রামনা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামনা এলাকার রামনা-ফুলঝুড়ির মূল সড়কটি।
ভাঙ্গন ঠেকাতে মাঝে মাঝে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ দায়সারা ভাবে জিওব্যাগ ফেললেও ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না তারা।
সম্প্রতি বিষখালী নদীর পানির স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় বামনা উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। অব্যাহত এ ভাঙ্গনে রামনা ফুলঝুড়ি সড়কের দুই -তৃতীয়াংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন রোধে এখনই স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না নিলে যেকোন সময় জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয় ভাঙ্গনে এই স্থানের সড়কটি বিষখালীতে বিলিন হলে নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে আশ- পাশের অন্তত ১০টি গ্রাম।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩০ বছর ধরে দক্ষিন রামনা এলাকা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। বিষখালী নদীর ভয়াল গ্রাসে কয়েক হাজার মানুষ নিঃশ্ব হয়ে গেছে। অনেকেই ভিটে মাটি হারিয়ে বর্তমানে বাঁধের পাশে সরকারি জমিতে বসবাস করছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার নদী তীরের মানুষ প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করেন। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে তারা তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন , প্রতি বছর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও স্থায়ী ব্লক নির্মানের কোন পদক্ষেপ তারা নিচ্ছেন না। এমনকি প্রতি বছর বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কোন রকমের দায়সারা জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন কবলিত মানুষের মুখ বন্ধ রাখেন।
ব্যাগ ফেলে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আবার ভাঙ্গন শুরু হয়। নদীর এই অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। আতঙ্কিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বসবাসকারিরা। নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষেরা। জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙ্গনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।
বিশিষ্ট্য শিল্পপতি ও বামনা উপজেলা বিএনপির আহব্বয়ক কমিটির সম্মানিত সদস্য আলহাজ্ব রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি এই এলাকার ভাঙ্গনে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরা প্রতি বছরই স্থায়ী ব্লক নির্মানের জন্য মানববন্ধন করে আসছি। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। এখনই ব্লক স্থাপন করা না হলে বরগুনা জেলা সদরের সাথে সহজ পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর আমরা নদী তীর বাসি অচিরেই নদী গর্ভে তলিয়ে যাবো।
রামনা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ বাকাবিল্লাহ ফরাজি বলেন, বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনের ফলে রাস্তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর ভাঙন থেকে এই জনপদ রক্ষায় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এভাবে নদীভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের নিজের বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিষখালী নদীর এই অংশে ব্লক স্থাপন করা হলে অব্যাহত ভাঙ্গন থেকে রাস্তা ও বসতভিটা রক্ষা পাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বামনা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রিয়াদুল কাদির যুগান্তরকে বলেন, আমারা এখানকার মানুষ সব সময়ই আতংকে থাকি। সামান্য কোন ঝড় হলেই আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এই বামনা উপজেলার এইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে আমাদের জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। বর্তমানে এই সড়কটি বিলীনের পথে।
একাদিকবার এই সড়ক নিয়ে টেলিভিশন, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাসহ অনেক মিডিয়া নিউজ হয়েছে। কিন্তু এর কোন সঠিক সমাধান হয়নি। আমরা নদীতীরের মানুষ৷ আমরা অন্যকিছু চাই না শুধু টেকসই একটি ভেঁরিবাদ চাই।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)আল ইমরান যুগান্তরকে বলেন, আমি এবিষয়ে তিন থেকে চার মাস পানি উন্নায়ন বোর্ড এক্সিয়েনের সাথে কথা বলেছি এবং গত সপ্তাহে যে আমাদের মাসিক সমন্বয় সভা মিটিং ছিলো সেখানেও আমি উপস্থাপন করেছি। তাদেরকে ফোন দিলে বলে আমাদের জিওব্যাগ রেডি আছে, জিওব্যাগ আমরা ফেলবো, ট্রলার নষ্ট হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এটি সম্পূর্ণ অথোরিটি পানি উন্নায়ন বোর্ড। তারাই এর ব্যাবস্থা নিবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ন ভেরিবাদ। এটি ছুটে গেলে আমদের পুরা বামনা উপজেলার ক্ষতি হবে।
এবিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব যুগান্তরকে বলেন, রামনা এলাকায় স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই কার্যক্রম শুরু হবে।
তাছাড়া বর্তমানে দক্ষিন রামনা ভাঙ্গন এলাকায় জরুরি আপদকালীন কাজের আওতায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। জিও-ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিং কাজ সমাপ্ত হলে ভাঙ্গন রোধ হবে।
এবিষয়ে জানতে বরগুনায় সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, বামনার রামনা ইউনিয়নের ভাঙ্গনের বিষয় নিয়ে বরগুনা পানি উন্নায়ন বোর্ড এক্সিয়েনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন অতি বৃষ্টিপাত, নিম্ন চাপ, অমবষ্যা ও পূর্ণিমার প্রভাবে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমানে তারা নাকি জিও-ব্যাগ ও ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছেন। ডাম্পিং হওয়ার পরে বাদ ভাঙনটা রোধ পাবে ।
তিনি আরো জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি বরগুনায় যোগদান করেছেন। আমার এখনো কোন সুযোগ হয়নি। আমি চেষ্টা করবো এ সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে বাঁধভাঙ্গন এলাকাটা পরিদর্শন করে পানি উন্নায়ন বোর্ড এক্সিয়েন সাথে পববর্তীব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।