ভারতকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ মেনে নেওয়ার পরামর্শ
অনলাইন ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, 11:33 PM
অনলাইন ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, 11:33 PM
ভারতকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ মেনে নেওয়ার পরামর্শ
শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা তলানি গেছে। ভারত এখনও শেখ হাসিনার পতন মানতে পারছে না। তাদের ভাবনায় এখনও শেখ হাসিনা। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা।
শুভেন্দু বলেছেন, শেখ হাসিনাই বৈধ প্রধানমন্ত্রী। বাকীরা অবৈধ। অচিরেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে ফিরবেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাকে স্যালুট করে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে চূড়ান্ত নৈরাজ্যের পরিস্থিতি চলছে। বেছে বেছে হিন্দুদের ওপরে হামলা করা হচ্ছে। হিন্দুদের মন্দির, দোকান, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ভারতের ওপরে নির্ভরশীল। ভারত পণ্য না পাঠালে ভাত-কাপড় জুটবে না। ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ না পেলে আঁধারে ডুববে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে আস্থার ঘাটতির মধ্যেই ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সেটি বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন এবিষয়ে নোট নিয়ে গেলাম আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো থাকলে তাতে দু্ই দেশই লাভবান হতে হবে। কারণ দুই দেশেলই ব্যবসা আছে। সম্পর্কের অবনিত হলে ভারতেরই ক্ষতি বেশি হবে বলে বিশ্লেষকরা বলেছেন।
আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশের জনগণকে প্রাধান্য দিতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা একেএম শামসুদ্দিন কলামে লিখেছেন, শেখ হাসিনা ছিল ভারতের জন্য ‘সোনার ডিম’ দেওয়া রূপকথার হাঁসের মতো। শেখ হাসিনার কাছে যখন যা চেয়েছে, তাই পেয়েছে তারা অনায়াসে। কাজেই এমন একজনই তাদের প্রয়োজন ছিল। সোনার হাঁস যতদিনই বেঁচে ছিল, প্রতিদিন একটি করে সোনার ডিম পাওয়ার লোভে গৃহস্থ হাঁসটিকে যেমন যত্ন করতেন; ভারতও তেমনই তাদের স্বার্থে হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যা করার তাই করেছে। এখানে ভারতের কায়েমি স্বার্থ রয়েছে।
ভারত চেয়েছিল হাসিনা চিরস্থায়ীরূপে বাংলাদেশের ক্ষমতায় টিকে থাকুক। তাতে বাংলাদেশে তাদের চিরস্থায়ী স্বার্থ নিশ্চিত হবে। হাসিনা যেখানে একাই ভারতের স্বার্থরক্ষা করে গেছেন, সেখানে অন্য কারোর প্রয়োজন পড়েনি তাদের। ফলে তারা এ দেশের জনগণকে বিন্দুমাত্রও গুরুত্ব দেয়নি। তাই এখন শেখ হাসিনা নেই ভারতকে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
ভারতের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে দেশটিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে সহায়তা করতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা তার পোস্টে বলেন, ‘যদি ভারতের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারে। সে ক্ষেত্রে শান্তি রক্ষা মিশনে সৈন্য সহায়তা বাড়িয়ে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা বলতাম হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ চাই- আজকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ পেয়েছি, এখন আওয়ামীবিহীন বাংলাদেশ করতে হবে। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, ভদ্রলোক আর আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র পাশাপাশি চলতে পারে না।’
জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠার তাণ্ডবে হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় গিয়ে শেখ হাসিনা জামায়াতের দায়ের করা মামলাটি খারিজের ব্যবস্থা করেছিল। সেই মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। তাকে (শেখ হাসিনা) বিচারের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে জুলাই গণহত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে।’
বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের যেসব আইন সংশোধিত হয়েছে, তা সঠিক হয়েছে। আইনের আরও সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। সে ব্যাপারে আমরা সম্মিলিতভাবে আরও কিছু বিষয়ে প্রস্তাবনা দেব।’
হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারত যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আশা করি তারা বাংলাদেশের রুল অব ল’র প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে। বাংলাদেশ থেকে যদি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়া হয় সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে।’