শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতিতে সেজেছে জরাজীর্ণ দেয়াল
নিজস্ব প্রতিনিধি
২০ আগস্ট, ২০২৪, 9:42 AM
নিজস্ব প্রতিনিধি
২০ আগস্ট, ২০২৪, 9:42 AM
শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতিতে সেজেছে জরাজীর্ণ দেয়াল
এক সময়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক পোস্টার আর বিজ্ঞাপনে ঢেকে থাকা শেওলাপড়া জরাজীর্ণ দেওয়াল এখন শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতিতে নতুন রূপে সেজেছে। সেখানে শোভা পাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠা কোটা আন্দোলনের স্লোগানসহ দেশের বিভিন্ন অন্যায়ের চিত্র আর সমাজ সংস্কারমূলক উক্তি। জামালপুর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব গ্রাফিতি আঁকেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার জামালপুর রেল স্টেশনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন উক্তি ও গ্রাফিতি আঁকছে। প্রথমে একদল শিক্ষার্থী প্লাটফর্মের জরাজীর্ণ দেওয়াল পরিষ্কার করে। অন্যদল বিভিন্ন রং মিশিয়ে তুলির আঁচড়ে উক্তি, আলপনা ফুটিয়ে তুলছেন। আঁকা হচ্ছে উৎসাহমূলক নানা চিত্র। আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণ করে জানানো হয় শ্রদ্ধা। সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষার্থীদের কি চাওয়া সেটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে আঁকা শিল্পকর্ম আকৃষ্ট করছে পথচারী ও সাধারণ মানুষদের।
দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে— ‘ঘুষ চাইলে ঘুসি’, ‘বৈষম্যহীন দেশ গড়ি’, ‘দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ব’, ‘পুলিশ নয় ক্ষমতার, পুলিশ হোক জনতার’, ‘মোরা আকাশের মতো বাধাহীন’, ‘পৃথিবীটা মানুষের হোক ধর্ম থাকুক অন্তরে, মসজিদে আযান হোক ঘণ্টা বাজুক মন্দিরে’ ইত্যাদি উক্তি।
শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু করে এক দফার মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় রাখতেই গ্রাফিতি আঁকা। গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নতুনভাবে শুরু হওয়া বাংলাদেশের গল্প। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অভ্যুত্থানের অবদান তুলে ধরা হচ্ছে।
জাকারিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে পতন ঘটিয়েছি এবং সারা দেশে ও জেলায় আমরা প্রথমে পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে যানজট নিরসনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা গ্রাফিতির মাধ্যমে সারা জামালপুর শহরে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন তথ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছি এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমরা জামালপুর রেল স্টেশনের প্রতিটি দেওয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
আবৃত্তি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আজকে আমরা জামালপুরের শিক্ষার্থীরা মিলে এই রেল স্টেশনে একত্রিত হয়েছি। স্টেশন পরিষ্কারের পাশাপাশি আমরা স্টেশনের দেওয়ালে বিভিন্ন সচেতনতামূলক গ্রাফিতি অঙ্কনের কাজ শুরু করেছি। দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে ছিনতাই, টিকিট কালোবাজারি থাকে তাই স্টেশনে থাকা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি।
এছাড়াও সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, ফৌজদারি মোড়, নতুন রেলওয়ে ওভারপাস, বাইপাস মোড়, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও রেল গেইটসহ বিভিন্ন জেলার উপজেলাগুলোর বেশ কিছু স্থানে এসব গ্রাফিতি দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের এমন কাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে আব্দুল মান্নান মন্ডল নামে এক ট্রেনযাত্রী বলেন, স্টেশনের দেওয়ালগুলোতে অনেক আজেবাজে লেখা থাকতো। পোস্টার লাগানো থাকতো। এখন শিক্ষার্থীরা যে সুন্দর ছন্দ ও আঁকআঁকি করছে এতে স্টেশনের সৌন্দর্যের পাশাপাশি শৃঙ্খলা ফিরে আসতেছে।